ঢাকা।। প্রতিবছরই ঈদ আসলেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায় সড়ক মহাসড়ক ও নৌ পথে। পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি ফেরা মানুষের পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। রাস্তায় অধিক যাত্রী ও যানের চাপে বছরের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদ ছুটির দিনগুলোতে গড় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায়।
এমন বাস্তবাবতায় যানবাহন তদারককারী সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি – বিআরটিএ’র একজন কর্মী হিসেবে উৎসবকালীন ছুটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমি কিছু মতামত তুলে ধরছি যা সম্পূর্ণই আমার ব্যাক্তিগত। আমার কাছে মনে হয়েছে, যদি আমরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করি, তবে সড়কের উপর থেকে একই সময়ে চাপ যেমন কমবে, তেমনি কমবে দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর মিছিল। আমরা সকলেই অবগত আছি যে, সরকারি অফিসে সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন। শুক্রবার এবং শনিবার এই দুই দিন সরকারি অফিস বন্ধ থাকে। প্রাইভেট সেক্টরে প্রায় সব অফিস শনিবার খোলা থাকে।
এরপরও আমরা যদি লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাবো যে, সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এবং শনিবার রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে যানজট থাকে। আরেকটু পরিস্কার করে বললে বলতে হয় যে, শুধুমাত্র সরকারি অফিস বন্ধ (শুক্রবার এবং শনিবার) তাতেই রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়, আর প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদের সময় রাস্তার কী অবস্থা হতে পারে? একটু ভাবুন তো, যেখানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন, সেখানে প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদের ছুটি মাত্র তিন দিন। জতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ। আর এই ধারা অব্যাহত রাখতে অফিস খোলা রাখা যেমন জরুরি, তেমনি রাস্তায় দুর্ঘটনা ও যানজটের কারণে যে ক্ষতি তাও কমাতে হবে। স্বপ্ন পরিসরে উপস্থিতি রেখে অফিস করা যায় তা এই মহামারী করোনা আমাদের শিখিয়েছে।
তাই আমার মতামত ঈদে সাতদিন ছুটি থাকবে কিন্তু অফিস বন্ধ থাকবে মাত্র তিনদিন। বিষয়টি যদি আমরা এবারের পালিত হওয়া পবিত্র ঈদুল ফিতর দিয়ে হিসেব করি, তাহলে দেখা যায় এবারের ঈদ ছিল ১৪ মে। সরকারি ভাবে ঈদের ছুটি ছিল ১৩ থেকে ১৫ মে। এখন যদি কোন অফিসে মোট ১’শ কর্মী থাকেন, আমার প্রস্তাবনা অনুযায়ি তাদের মধ্য থেকে ৫০ জনের ছুটি হতে পারতো ৯- ১৫ই মে পর্যন্ত ৭ দিন। বাকি ৫০ জন ছুটিতে যেতো ১৩ থেকে ১৯ই মে এই ৭ দিন। এখানে ১৩- ১৫ই মে কমন ছুটির প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে পরিবারের কারো যদি ছুটি আগে পরে হলেও ওভারলেপিং এর কারণে ছুটিতে দেখা হবে। যারা ঈদুল ফিতরে ছুটি কাটিয়েছে তারা ঈদুল আযহাতে পরে ছুটি কাটাবে, এভাবে সমন্বয় করা যেতে পারে। আর এতে রাস্তর উপর হতে চাপ অর্ধেক কমবে। সাথে সাথে কমবে মৃত্যুর মিছিল। যেখানে প্রকৃত পক্ষে অফিস বন্ধ থাকছে মাত্র তিনদিন। বাকি দিন গুলো সীমিত পরিসরে অফিস চলবে।মহামারী করোনা আমাদের শিখিয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশে বাসায় বসেও অফিস করা সম্ভব।
আমরা দেখেছি, ঈদে ছুটির পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্যে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে। এসময় শ্রমিকদের বলতে দেখা গেছে, যানজট ডিঙ্গিয়ে বাড়ি যেতে যেখানে দুইদিন লাগে, সেখানে কিভাবে তিন দিনের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে আবার আবার কর্মস্থলে ফিরে আসবে। আমরা দেখেছি এদেশের মানুষ, পরিবহন বন্ধ থাকার পরও নাড়ির টানে পায়ে হেটে বাড়ি গেছে। এদেশে এখনো মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং খেটে খাওয়া বহু মানুষ খরচ বাঁচাতে সারা বছরে মাত্র দু-বার দু-ঈদে বাড়ি যায়। এখনি সময়, বিষয়টি বিবেচনা করার।
মুহাম্মাদ অহিদুর রহমান,
মোটরযান পরিদর্শক,
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)